কমিশনের চেয়ারম্যান মতবিনিময় সভার শুরুতে কমিশনের সম্মানিত সদস্য ও শ্রম আইন সংশোধন বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় কমিটির সদস্যবৃন্দকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন শ্রম খাতের সংস্কারের কথা আসলে প্রথমে শ্রম আইন সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনায় আসে। কমিশনের সুপারিশের একটি বড় অংশ শ্রম আইন সংস্কার নিয়ে থাকবে। তাই বিভিন্ন ধারা সংশোধনের ক্ষেত্রে কমিটির প্রস্তাব কমিশনের সাথে শেয়ার করা, উক্ত প্রস্তাব কমিশন কীভাবে কাজে লাগাতে পারে, কমিশনের ও কমিটির কাজ যেনো সাংঘর্ষিক না হয়, উভয়ের কজ যেনো একটি সার্বজনীন ও বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। ০২। কমিশন কিছু মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করে তা বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করে। বাকি বিষয়গুলি পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। শ্রম খাতের সাথে জড়িত সকল মানুষের জন্য একটি সার্বজনীন সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। বিভিন্ন অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন খাতের শ্রমিক তার শ্রমের স্বীকৃতি চেয়েছেন। গৃহশ্রমিক কে বুয়া বলার প্রতিবাদ করে তাদের না ও কাজের স্বীকৃতি দাবি করেছেন। এজন্য সকল শ্রমিক তাদের ডেটাবেজ তৈরি, সামাজিক সুরক্ষা প্রদান, সংগঠনের স্বাধীনতাসহ কিছু মৌলিক শ্রম অধিকার দাবি করেছেন। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সরকারি চাকরির পথ বন্ধ করা হয়েছে। আউটসোর্সিং কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিক প্রসূতিকল্যাণ ছুটি ও মজুরি পান না। সুতরাং শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান, বাস্তবায়নের কার্যকর পদ্ধতি তৈরি এবং আইনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। ০৩। সম্মানিত সদস্য এডভোকেট এ কে এম নাসিম বলেন শ্রম আইনের বেশিরভাগ সংশোধনগুলো শ্রমিকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। আই এল ও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাওয়ার প্রেক্ষিতে বর্তমান আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলছে যার মধ্যে সংগঠনের স্বাধীনতা, ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, এন্টি ইউনিয়ন ডিসক্রিমিনেশন ইত্যাদি বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ না করলে এগুলো বারবার ফিরে আসবে। ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের কার্যক্রম যথাযথ হচ্ছে না এবং উক্ত দপ্তর এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারছে না। আইন সংশোধনে বর্তমান কমিটি এ বিষয়গুলো সমাধানে গুরুত্ব সহকারে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ০৪। শ্রম অধিদপ্তরের ট্রেড ইউনিয়নের উপর কতটুকু নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা থাকবে তা পুনঃবিবেচনা করা দরকার। একটি ইউনিয়ন যখন গঠনের পর্যায়ে থাকে তখন এর সাথে জড়িত সকল শ্রমিকের চাকরি উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে থেকে বাদ দেয়া হয়, শ্রমিক এ বিষয়ে অভিযোগ করলে তাকে আদালতের মাধ্যমে বা শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে টার্মিনেশন ধরে সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করা হয় যা কোনভাবেই অসৎ শ্রম আচরণের প্রতিকার হতে পারে না। এ ধরণের মামলা শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে দায়ের করার পাশাপাশি সংক্ষুব্ধ শ্রমিক যাতে দায়ের করতে পারে তা কমিটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন মর্মে অনুরোধ করেন। ০৫। শ্রম আদালতের মামলা পরিচালনার প্রত্যেকটা পর্যায়ে গতিশীলতা এনে মামলা যাতে কম সময়ে নিষ্পত্তি হয় সেদিকে জোরালোভাবে নজর দেয়া দরকার। আদালত ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে শ্রমিকের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে কমিটি কোন কাজ করছে কিনা সে বিষয়ে তিনি জানতে চান। এটি চালু হলে শ্রমিক যেনো তার আইনগত ন্যুনতম পাওনা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। ০৬। ত্রিপক্ষীয় শ্রম আইন সংশোধন কমিটির আহ্ববায়ক বলেন এবারের সংশোধনের দুর্বল দিক হলো এটি অতিদ্রুত করতে হচ্ছে, আই এল ও কমপ্লেইন্ট, আর্টিকেল ২৬ এর কেস এবং আই এল ও অবজারভেশন ইত্যাদি বিষয়গুলি অগ্রাধিকার ধরে এ সংশোধন কাজ চলছে। কমিটি অনেকগুলো বিষয়ে একমত হয়েছে; বাকি বিষয়গুলি ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদে উত্থাপন করা হবে। সংগঠনের স্বাধীনতা ও যৌথ দরকষাকষির ক্ষেত্রে আই এল ও এর সুপারিশ যথাসম্ভব অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আইনে যেটুকু সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারপক্ষ মালিকপক্ষকে সমঝোতায় আসার জন্য এডভোকেসি অব্যাহত রেখেছে। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের পক্ষে ৫৬ টি সেক্টরের জন্য মজুরি নির্ধারণ করা সম্ভব নয় তাই ০৫-০৬ টি বৃহৎ খাত ধরে মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি ভাবা যেতে পারে বলে তিন বলেন। ০৭। সম্মানিত সদস্য জনাব ফারুক আহাম্মদ বলেন তিনি সম্মানিত সদস্য এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তার সাথে একমত তবে বর্তমান সংশোধন একটি বিশেষ উদ্দ্যেশ্য নিয়ে করা হচ্ছে। তিনি বলেন আই এল ও এর ৩২ টি ইস্যু সমাধান করার চেষ্টা চলছে। শ্রম আইন ও বিধিমালা সংশোধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। শ্রম সংস্কার কমিশনের কার্যপরিধি অনেক বিস্তৃত। আইনের কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে মালিকপক্ষ ভাবছেন এবং এর সাথে কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বড় পরিসরে কজ করবেন। মালএশিয়া, শ্রীলংকাসহ আই এল ও কনভেনশন অনুসমর্থনকারী দেশ কীভাবে বিষয়গুলি চর্চা করছেন তা দেখা ও পর্যালোচনা করে আমাদের উপযোগী একটি পদ্ধতি চালু করতে হবে। তিনি বলেন সরকার, মালিক ও শ্রমিক আমরা সবাই এগুলো যথাযথভাবে মেনে চলছিনা। এক্ষেত্রে কিছুটা সময় নিয়ে মালিক ও শ্রমিক একসাথে সমস্যার সমাধান করতে চাই। মালিকপক্ষ এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শ্রমিকের সংজ্ঞা সার্বজনীন করতে চান যাতে কেউ তার প্রাপ্য থেকে বাদ না যায়। শ্রমিকের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা কীভাবে ধীরে ধীরে সংরক্ষণ করা যায় তা মালিকপক্ষ চেষ্টা করছেন। মালিকসংগঠনসমূহ এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে ব্যবসায়ে থাকতে হলে বিধিবিধান ও বাধ্যবাধকতাসমূহ মেনে চলতে হবে। ০৮। সম্মানিত সদস্য জনাব রাজেকুজ্জামান রতন বলেন বর্তমান শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে চলছে যেখানে আইএলও এর দেয়া কনভেনশন ৮১,৮৭,৯৮ এর অবজারভেশনগুলো যতটা সম্ভব অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর সাথে মজুরি সংক্রান্ত বিষয়, ধারা-১(৪) এ শ্রম আইনের আওতা বহির্ভূত বিষয় সমূহ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মুনাফার উদ্দ্যেশ্যে পরিচালিত নয় এমন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকের ক্ষেত্রে শ্রম আইন প্রযোজ্য করা ও তাদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ব্যবহারকারী সকলকে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি এবং দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সুরক্ষার আওতায় আনার বিষয়টি জোরালোভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরন, বিশেষ বিবেচনা থাকতে পারে কিন্তু কোন শ্রমিক যেনো মৌলিক শ্রমিক অধিকার ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। শ্রম আইনের সংশোধন হলে কী প্রভাব পড়বে তা বিবেচনার ক্ষেত্রে নেতিবাচক দুরবর্তী ভীতি থেকে বের হয়ে আসা জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন। ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তার ‘সন্তুষ্টি’ শব্দ বাদ দেয়ার জন্য শ্রমিকের পক্ষ থেকে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। ০৯। মজুরির সংজ্ঞা পুন:নির্ধারণ, মজুরি নির্ধারণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ, শ্রমিকের ন্যূনতম মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, ভবিষ্যৎ কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও ঝুকিসমূহ চিহ্নিত করা, কাজের পরিবর্তন ও বৈচিত্রের সাথে শ্রমিকের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান, গতিশীল অর্থনীতির পূর্বশর্ত হিসেবে শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা, বিশেষ বিশেষ খাতের শ্রমিকের বিশেষ ধরনের কাজের শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, চাকুরিকালীন দুর্ঘটনার ক্ষতিপূলণ, সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা এবং গ্রাচ্যুইটি সুবিধা ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করে শ্রমিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানান। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রবীন জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন। শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে যে সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে তা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের কার কী ভূমিকা তা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। ১০। সম্মানিত সদস্য ব্যরিস্টার নিহাদ কবির বলেন কমিশন সদস্যগণের মধ্যে একমতের জায়গা বেশি হওয়ায় তৃতীয় পক্ষের অভিযোগ তোলা গ্রহণযোগ্য নয়। শিল্পে শ্রমিকের অধিকার ও কল্যানের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক উত্তম চর্চা আনতে গিয়ে যেনো শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ না হয় যার ফলে শ্রমিকের কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়। সব ক্ষেত্রে উত্তম চর্চা অনুসরণ করতে না পারলেও যতটা সম্ভব আমাদের তা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের ট্যাক্স ব্যবস্থা ও ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। একজন মালিক তার প্রতিষ্ঠানে সুস্থ ট্রেড ইউনিয়ন চর্চা হোক সেটি প্রত্যাশা করেন। কমিশন ১-২-৩-৫ বছর মেয়াদি সুপারিশ করে পরবর্তীতে কীভাবে শ্রম ও শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব তা চেষ্টা করতে পারে। ১১। সম্মানিত সদস্য জনাব তপন দত্ত সংগঠনের স্বাধীনতা ও যৌথ দরকষাকষির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ব্যক্তি কর্তৃক ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম ও যৌথ দরকষাষির কার্যক্রমে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়া দরকার বলে মত দেন। তিনি লিখিতভাবে এ বিষয়ক প্রস্তাব কমিশনে দাখিল করবেন মর্মে জানান। ১২। জনাব সাইফুদ্দিন আল মামুন, অতিরিক্ত ডিইইজি, শিল্প পুলিশ বলেন তার বাহিনী শিল্পক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে চান। ১৩। সম্মানিত সদস্য জনাব তাসলিমা আখতার সংগঠনের স্বাধীনতা চর্চা কীভাবে সহজ করা যায় তা কমিটিকে গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখার অনুরোধ করেন। ১৪। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম অধিশাখার যুগ্মসচিব জনাব মাসুকুর রহমান সিকদার বলেন শ্রম পরিদর্শন, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন, এন্টি ইউনিয়ন ডিসক্রিমিনেশন, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে আইএলও এর অবজারভেশন বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে যতটা অন্তর্ভুক্ত করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৫। জনাব আ ন ম সাইফুদ্দিন বলেন শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে শুরুর দিকে সকল অংশীজন, আইএলও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর প্রস্তাব/মতামত বিবেচনা করা হয়। আইএলও – ই ইউ রোডম্যাপ এর সাথে ইউ এস ডল এর প্রস্তাবনা যুক্ত হয়। ত্রিপক্ষীয় কমিটি আইএলও এর দেয়া ১০৫ টি পয়েন্ট ও অংশীজনের প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু বিষয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (TCC) তে প্রেরণ করা হয়েছে। সুতরাং এই সংশোধন যে শুধুই আইএলও এর তাড়না থেকে করা হচ্ছে এটি সঠিক নয়। ১৬। জনাব ফারুক আহাম্মাদ বলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন এ প্রায় ১১০০ কোটি টাকা জমা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উক্ত ফাণ্ড পরিচালনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কীভাবে শ্রমিকের কল্যাণ নিশ্চিত করা তা নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ১৭। ত্রিপক্ষীয় কমিটির সদস্য জনাব খোরশেদ আলম বলেন কমিটি শ্রমিকের সংজ্ঞা কীভাবে পুন:নির্ধারণ করা যায়, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও ও শ্রমিকের অন্যান্য সুরক্ষা কীভাবে বাড়ানো যায় সে চেষ্টা করবে। ১৮। জনাব মাহফুজুর রহমান ভুইয়া, যুগ্মমহাপরিদর্শক, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-১(৪)(ট) এর প্রয়োগের ক্ষেত্র নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন শ্রম আইনের সকল অধ্যায়ের প্রয়োগ নিষিদ্ধ না করে খোলা বন্ধ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, চাকুরিচ্যুতি মজুরি ও ক্ষতিপূরনের ক্ষেত্রে শ্রম আইনের প্রযোজ্যতা দরকার। ধারা-১৩২, ১৬৮ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা দায়েরের ক্ষমতা থাকলেও বর্তমান আইনে এটি নেই। তিনি শ্রমিকের স্বার্থে আইনে এটি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। তিনি ধারা ১২৪ক এ আপোষ মীমাংসা করার ক্ষমতা শ্রম অধিদপ্তরকে প্রদানের সিদ্ধান্ত পুন:বিবেচনার অনুরোধ করেন। ১৯। সম্মানিত সদস্য জনাব সাকিল আখতার চৌধুরী ত্রিপক্ষীয় শ্রম আইন সংশোধন বিষয়ক কমিটির কাজ শেষ হওয়ার পর এটিকে কার্যকর রাখা যায় কিনা বা এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ হয়ে যায় কিনা জানতে চান। ২০। সম্মানিত সদস্য জনাব এ. কে. এম নাসিম বলেন সরকারি দপ্তরের স্বেচ্ছাধীন ক্ষতা কমানো দরকার এবং শ্রম অধিদপ্তরে সংস্কার করে তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা দরকার। এটি করা গেলে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কেস টু কেস আইনের অসামঞ্জস্যমূলক প্রয়োগ কমবে। ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন এর বিধান ও পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করতে হবে যাতে যারা বিধিবিধান অনুসরণ করছে তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা যায়। শ্রম আইনের ধারা-১৮০ অনুযায়ী চাকরির অবসান হওয়া শ্রমিকের ইউনিয়নের সদস্যপদ বাতিল না করে এ বিষয়ে মামলা চলমান থাকলে সদস্যপদ অব্যাহত রাখার বিধান করা যেতে পারে। একটি প্রতিষ্ঠানে তিনটি ইউনিয়নের বিধান কিছুটা শিথিল করা যেতে পারে। আবেদনের ৫৫ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রদান বা নামঞ্জুরের সময়সীমা বাধ্যতামূলক না ধারণাগত তা সুনির্দিষ্ট করা দরকার বলে উল্লেখ করেন। আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে শ্রমিকের সব উদ্বেগ যেনো বিবেচনা করা হয় সে অনুরোধ করেন। ২১। কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান বলেন এ কমিশন অনেক অন্তর্ভুক্তিমূলক কেননা সদস্য হিসেবে মালিক, শ্রমিক, আমলা, গবেষক, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিশনকে ঘিরে মানুষের ইতিবাচক প্রত্যাশা ও আকাংঙ্খা তৈরি হয়েছে। কমিশন একটি সর্বজনীন আইন প্রণয়নে কমিটির ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। শ্রম আইন কমিশন ১৯৯২ সালে যে রিপোর্ট দাখিল করে তা দীর্ঘ সময় পর ২০০৬ সালে আইনে পরিণত হয় এবং এটিতে ৪৭ টি আইনকে একত্র করতে গিয়ে অনেক সমস্যা ও অসামঞ্জস্য তৈরি হয়। শ্রম আইন কোড হিসেবে তৈরিতে যে মেধা, শ্রম, সময় ও দুরদৃষ্টির প্রয়োজন ছিলো তার ঘাটতি থাকায় দ্রুত একটি আইন কোডিফাই করতে গিয়ে নানা সমস্যা ও অসঙ্গতি থেকে গেছে। আইন প্রণয়েনের ক্ষেত্রে সংবিধান, আন্তর্জাতিক শ্রম মান ও জনগনের আকাংঙ্খাকে বিবেচনা করতে হবে। ত্রিপক্ষীয় মানে সব বিষয়ে একমত না ন্যূনতম মানের বিরোধী কিনা তা নিশ্চিত করা দরকার। আউটসোর্সিং এর নামে যেভাবে শ্রমিকের অধিকার লংঘন করা হচ্ছে এটি পরবর্তীতে এমন জটিল আকার ধারন করবে যা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এটি একটি জাতীয় উদ্বেগের কারন হয়ে দাড়াবে। তিনি কমিটির সকলকে এবং সম্মানিত সদস্যবৃন্দকে পুনরায় ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি করেন।