কর্ম পরিধি

শ্রম সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্য ও কার্যপরিধি

বাংলাদেশের সকল (প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক) শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সবার জন্য শোভন কাজ, কাজের নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা, সংগঠন ও দরকষাকষির অধিকার এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়ন করা যা সুষ্ঠু শিল্পসম্পর্ক চর্চার পরিবেশ তৈরি এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং মর্যাদাকর বাংলাদেশ গড়ে তোলার অভিযাত্রায় অবদান রাখবে। উপরোক্ত উদ্দেশ্য বিবেচনায় রেখে কমিশন নিম্নোক্ত বিষয়াদি পর্যালোচনাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়ণ করবে:

১. শ্রম সংক্রান্ত আইন ও নীতিসমূহ পর্যালোচনা:

বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রম সংক্রান্ত সকল নীতি, আইন, বিধি ও সংশ্লিষ্ট দলিলাদি যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯, শ্রমনীতি ২০১২, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য সেইফটি নীতিমালা ২০১৩, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫, শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা ২০১০ এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন ২০০৬ পর্যালোচনা ও সুপারিশ তৈরি করা;

২. বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সংস্কার:

শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকল্পে আইন ও নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- শ্রম অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়নে সুপারিশ করা;

৩. ট্রেড ইউনিয়ন, শিল্পসম্পর্ক ও ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থার উন্নয়ন :

সকল শ্রমিকের সংগঠিত হওয়া, দরকষাকষি ও প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত করা, প্রতিষ্ঠান পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর সামাজিক সংলাপ ও দরকষাকষি এবং গণতান্ত্রিক ও দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকাÐ চর্চার পরিবেশ উন্নয়ন, কার্যকর ও সুসমন্বিত ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে জাতীয়, সেক্টরাল ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ের বিদ্যমান ব্যবস্থা যেমন- ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ-টিসিসি’র কাঠামো ও কার্যপরিধি পর্যালোচনা ও সুপারিশ তৈরি করা; এ লক্ষ্যে বিগত সময়ের উল্লেখযোগ্য শিল্প অসন্তোষসমূহ থেকে শিক্ষণীয় বিষয় চিহ্নিত করা।

৪. শ্রমিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও বিরোধ নিষ্পত্তি:

সকল শ্রমিকের ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা, অসন্তোষ নিরসন, শিল্পবিরোধ নিষ্পত্তির বিদ্যমান প্রক্রিয়া যেমন- প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, সালিশ ও মধ্যস্থতা, এবং শ্রম আদালত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যপরিধি ও কার্যপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা ও সুপারিশ তৈরি করা;

৫. কর্মসংস্থান, কাজের নিরাপত্তা ও দক্ষতা উন্নয়ন:

বিশ^ব্যাপী প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উৎপাদন প্রক্রিয়া, কাজের ও নিয়োগের ধরন পরিবর্তন যেমন- চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্লাটফরম/গিগ ইকোনমি, জনমিতির বিন্যাস এবং কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় রেখে বিদ্যমান কাজের নিরাপত্তা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠা, এবং শ্রমিকের বিশেষ করে শিক্ষাধীন, (এপ্রেন্টিস), আউটসোর্সিং, মাস্টাররোলভিত্তিক শ্রমিক, সেবা খাতের শিক্ষানবীশ ও যুবা কর্মীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি;

৬. শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন, মজুরি ও ন্যায্য হিস্যা:

শ্রমিক ও তার পরিবারের মানবিক মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করা, মৌলিক চাহিদা পূরণ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি ও জাতীয় দারিদ্র বিমোচন লক্ষ্যমাত্রা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু ও নারীর জীবনমান উন্নয়নে ঘোষিত নীতিমালা এবং ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য বিবেচনায় নিয়ে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিদ্যমান মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়া, মানদÐ ও নি¤œতম মজুরি বোর্ডের গঠন ও কার্যপরিধি পর্যালোচনা ও সুপারিশ তৈরি;

৭. পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা:

সবার জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উন্নয়নে বিদ্যমান আইন, নীতি, পরিদর্শন ব্যবস্থা, ক্ষতিপূরণের মানদÐ ও পরিশোধ প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কাঠামোসমূহ যেমন- জাতীয় শিল্প স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাউন্সিল, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সেইফটি কমিটি, এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিমসহ অন্যান্য ব্যবস্থা পর্যালোচনা ও সুপারিশ তৈরি। এ লক্ষ্যে বিগত সময়ের উল্লেখযোগ্য শিল্প-দুর্ঘটনাসমূহ থেকে শিক্ষণীয় বিষয় চিহ্নিত করা;